Daina Chakma's Reviews > পাকদণ্ডী
পাকদণ্ডী
by
কী ভীষণ মায়ামাখা লেখনী! লীলা মজুমদারের শৈশব কেটেছে 'হাই উইন্ডস' নামের এই স্বপ্নের বাড়িতে, শিলং শহরে। খুব ছোটকাল থেকেই বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে ভাইবোনদের বশ করে ফেলতেন। সেই ছিল শুরু। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন, লিখলে ছোটদের জন্যই লিখবেন, ছোটদের জন্যই বাঁচবেন।
লীলা মজুমদারের জন্ম বিখ্যাত রায় পরিবারে। সেইসূত্রে লীলা হলেন সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি। সন্দেশ পত্রিকার জনক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী হতেন জ্যাঠামশাই। জ্যাঠ্যামশাই ছিলেন লীলার কাছে সুন্দর একটা ছবির মতো। এই বই দেখছেন, এই বেহালা বাজাচ্ছেন, এই ঈজেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছেন। ছবির মতো এই মানুষটিই ছোটবেলায় লীলার মন গড়ে দিয়েছেন। তবে হৃদয়ে গুরুর স্থান দিয়ে রেখেছেন বড়দা-কে। কোঁকড়া চুল, শীর্ণ গাল, তার উপর কোথায় একটা বড় আঁচিল - দেখে দেখে চিরকালের মতো সে দৃশ্য মনে আঁকা হয়ে গিয়েছিল। আবোলতাবোলের একটা ছবিতে তুলি লাগাতে লাগাতে বড়দা সুকুমার একদিন বলেছিলেন, "তুই-ও এসব করবি, কেমন?" সেই বড়দা সুকুমারের নির্দেশে একখানা ছোট গল্প লিখে দিলেন সন্দেশ পত্রিকার জন্য, ছাপাও হল। নিজে নাম দিয়েছিলেন ‘লক্ষ্মীছাড়া’, বড়দা বদলে রাখলেন ‘লক্ষ্মী ছেলে'। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি লীলাকে। ছোটদের জন্য লিখে গেছেন জাদুকরী সব গল্প। কী ভীষণ পেলব আর মায়ায় ভরপুর একেকটা গল্প! অথচ যার কলম এতো কোমল তাঁর ভেতরকার ভিতটা ছিল অসম্ভব পোক্ত আর অনড়। তখনকার নাম করা ডাক্তার সুধীন কুমার মজুমদারকে বিয়ে করে লীলা রায় হলেন লীলা মজুমদার। পাত্র হিন্দু হওয়াতে বেঁকে বসেছিলেন গোঁড়া ব্রাক্ষ্ম বাবা, প্রমদারঞ্জন। এভাবেই লীলার সাথে বাবার যোগাযোগ ছিন্ন হয় চিরকালের মতো।
ছাত্রী হিসেবে লীলা ছিলেন তুখোড় মেধাবী। ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর দখল ছিল ঈর্ষনীয়। বিএ এমএ উভয় পরীক্ষাতে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন কে���েছে দার্জিলিঙ, শান্তিনিকেতন এবং কলকাতায় অধ্যাপনা করে। রবিবাবুর টানেই বারবার ছুটে গেছেন শান্তিনিকেতনে। বেতার প্রযোজক হিসেবে আকাশবাণীতেও ছিলেন বছর সাতেক। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আজীবনের স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল অনেকের সাথে। সব ছেড়ে-ছুড়ে সাহিত্যচর্চায়-ও রত ছিলেন অনেকদিন। সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদনাও ��রেছেন। তাঁর উদ্যোগেই সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল 'সেরা সন্দেশ'। নিজে রচনা করেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। ক্লাসিক সাহিত্য অনুবাদে-ও পিছিয়ে ছিলেন না।
পাকদণ্ডী অর্থ যে পথ ঘুরে ঘুরে পাহাড়ের উপর দিয়ে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই নানা চরাই উৎরাই পেরুনো বিস্তৃত কলেবর আর সময়ের নানা বিবর্তনে লীলার বর্ণাঢ্য জীবনছবিকে এক শব্দে পাকদণ্ডী নামে আখ্যায়িত করা যায়। ভীষণ সুখপাঠ্য একটা বই!
by
Daina Chakma's review
bookshelves: favourite, close-to-my-heart, authoress, wishlist, memoir-or-bios
Sep 23, 2019
bookshelves: favourite, close-to-my-heart, authoress, wishlist, memoir-or-bios
"পাহাড়ের ঢালের ওপর বাড়ি। গেট দিয়ে ঢুকে কাঁকড় বিছানো পথ দিয়ে নেমে বারান্দায় পৌঁছতে হত। একহারা লম্বা বাংলো, সামনে টানা বারান্দা, তার কাঠের রেলিং। বাড়ির তিনদিক ঘিরে বৃষ্টির জল যাবার জন্য নালা কাটা। তার ওপর দুটি চ্যাপ্টা পাথর ফেলা। তার ওপর দিয়ে বারান্দায় উঠতে হয়। বারান্দার ছাদ থেকে তারের বেড়ায় অর্কিড ফুল ঝুলত। তাদের তলায় সবুজ ���াঠের বাক্সে জেরেনিয়ম ফুল ফুটত। লোকে এমন বাড়ি স্বপ্নে দেখে।"
কী ভীষণ মায়ামাখা লেখনী! লীলা মজুমদারের শৈশব কেটেছে 'হাই উইন্ডস' নামের এই স্বপ্নের বাড়িতে, শিলং শহরে। খুব ছোটকাল থেকেই বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে ভাইবোনদের বশ করে ফেলতেন। সেই ছিল শুরু। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন, লিখলে ছোটদের জন্যই লিখবেন, ছোটদের জন্যই বাঁচবেন।
লীলা মজুমদারের জন্ম বিখ্যাত রায় পরিবারে। সেইসূত্রে লীলা হলেন সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি। সন্দেশ পত্রিকার জনক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী হতেন জ্যাঠামশাই। জ্যাঠ্যামশাই ছিলেন লীলার কাছে সুন্দর একটা ছবির মতো। এই বই দেখছেন, এই বেহালা বাজাচ্ছেন, এই ঈজেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছেন। ছবির মতো এই মানুষটিই ছোটবেলায় লীলার মন গড়ে দিয়েছেন। তবে হৃদয়ে গুরুর স্থান দিয়ে রেখেছেন বড়দা-কে। কোঁকড়া চুল, শীর্ণ গাল, তার উপর কোথায় একটা বড় আঁচিল - দেখে দেখে চিরকালের মতো সে দৃশ্য মনে আঁকা হয়ে গিয়েছিল। আবোলতাবোলের একটা ছবিতে তুলি লাগাতে লাগাতে বড়দা সুকুমার একদিন বলেছিলেন, "তুই-ও এসব করবি, কেমন?" সেই বড়দা সুকুমারের নির্দেশে একখানা ছোট গল্প লিখে দিলেন সন্দেশ পত্রিকার জন্য, ছাপাও হল। নিজে নাম দিয়েছিলেন ‘লক্ষ্মীছাড়া’, বড়দা বদলে রাখলেন ‘লক্ষ্মী ছেলে'। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি লীলাকে। ছোটদের জন্য লিখে গেছেন জাদুকরী সব গল্প। কী ভীষণ পেলব আর মায়ায় ভরপুর একেকটা গল্প! অথচ যার কলম এতো কোমল তাঁর ভেতরকার ভিতটা ছিল অসম্ভব পোক্ত আর অনড়। তখনকার নাম করা ডাক্তার সুধীন কুমার মজুমদারকে বিয়ে করে লীলা রায় হলেন লীলা মজুমদার। পাত্র হিন্দু হওয়াতে বেঁকে বসেছিলেন গোঁড়া ব্রাক্ষ্ম বাবা, প্রমদারঞ্জন। এভাবেই লীলার সাথে বাবার যোগাযোগ ছিন্ন হয় চিরকালের মতো।
ছাত্রী হিসেবে লীলা ছিলেন তুখোড় মেধাবী। ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর দখল ছিল ঈর্ষনীয়। বিএ এমএ উভয় পরীক্ষাতে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন কে���েছে দার্জিলিঙ, শান্তিনিকেতন এবং কলকাতায় অধ্যাপনা করে। রবিবাবুর টানেই বারবার ছুটে গেছেন শান্তিনিকেতনে। বেতার প্রযোজক হিসেবে আকাশবাণীতেও ছিলেন বছর সাতেক। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আজীবনের স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল অনেকের সাথে। সব ছেড়ে-ছুড়ে সাহিত্যচর্চায়-ও রত ছিলেন অনেকদিন। সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদনাও ��রেছেন। তাঁর উদ্যোগেই সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল 'সেরা সন্দেশ'। নিজে রচনা করেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। ক্লাসিক সাহিত্য অনুবাদে-ও পিছিয়ে ছিলেন না।
পাকদণ্ডী অর্থ যে পথ ঘুরে ঘুরে পাহাড়ের উপর দিয়ে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই নানা চরাই উৎরাই পেরুনো বিস্তৃত কলেবর আর সময়ের নানা বিবর্তনে লীলার বর্ণাঢ্য জীবনছবিকে এক শব্দে পাকদণ্ডী নামে আখ্যায়িত করা যায়। ভীষণ সুখপাঠ্য একটা বই!
Sign into Goodreads to see if any of your friends have read
পাকদণ্ডী.
Sign In »
Reading Progress
September 9, 2017
– Shelved
September 9, 2017
– Shelved as:
to-read
September 4, 2019
–
Started Reading
September 23, 2019
–
Finished Reading
October 21, 2019
– Shelved as:
favourite
March 21, 2020
– Shelved as:
close-to-my-heart
May 30, 2020
– Shelved as:
authoress
August 3, 2023
– Shelved as:
wishlist
August 4, 2023
– Shelved as:
memoir-or-bios
August 7, 2023
– Shelved as:
close-to-my-heart
Comments Showing 1-3 of 3 (3 new)
date
newest »
message 1:
by
Farhana
(new)
-
added it
Jul 27, 2023 11:10PM
এ মুহূর্তে কোন পেইজ এই বইটা সেল করছে কিনা বলতে পারবে?
reply
|
flag