Jump to ratings and reviews
Rate this book

পাকদণ্ডী

Rate this book

442 pages, Hardcover

First published January 1, 1986

About the author

Leela Majumdar

113 books91 followers
Leela Majumdar (Bengali: লীলা মজুমদার Lila Mojumdar) was a Bengali writer. Her first story, Lakkhi chhele, was published in Sandesh in 1922. It was also illustrated by her. The children's magazine in Bengali was founded by her uncle, Upendrakishore Ray Chaudhuri in 1913 and was later edited by her cousin Sukumar Ray for sometime after the death of Upendrakishore in 1915. Together with her nephew Satyajit Ray and her cousin Nalini Das, she edited and wrote for Sandesh throughout her active writing life. Until 1994 she played an active role in the publication of the magazine.

Creative efforts :
An incomplete bibliography lists 125 books including a collection of short stories, five books under joint authorship, 9 translated books and 19 edited books.
Her first published book was Boddi Nather Bari (1939) but her second compilation Din Dupure (1948) brought her considerable fame From the 1950s, her incomparable children's classics followed. Although humour was her forte, she also wrote detective stories, ghost stories and fantasies.

Her autobiographical sketch 'Pakdandi' provides an insight into her childhood days in Shillong and also her early years at Santiniketan and with All India Radio.
Apart from her glittering array of children's literature, she wrote a cookbook, novels for adults (Sreemoti, Cheena Lanthan), and a biography of Rabindranath Tagore. She lectured on Abanindranath Tagore and translated his writings on art into English. She translated Jonathan Swift's Gulliver's Travels and Ernest Hemingway's The Old Man and the Sea into Bengali.
Satyajit Ray had thought of filming Podi Pishir Bormi Baksho. Arundhati Devi made it into a film in 1972. Chhaya Devi played the role of the young hero, Khoka's famed aunt Podipishi.

Awards :
Holde Pakhir Palok won the state award for children's literature, Bak Badh Pala the Sangeet Natak Akademi Award, Aar Konokhane Rabindra Puraskar. She had also won the Suresh Smriti Puraskar, Vidyasagar Puraskar, Bhubaneswari Medal for lifetime achievement, and Ananda Puraskar.
She has been awarded the Deshikottama by Visva Bharati, and honorary D.Litt. by Burdwan, North Bengal and Calcutta Universities.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
70 (53%)
4 stars
41 (31%)
3 stars
16 (12%)
2 stars
3 (2%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 30 of 31 reviews
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
172 reviews1,191 followers
July 22, 2016
কী গভীর, কী নরম, কী কোমল সেই পথ। কখনো অতীত, কখনো বর্তমানের ছায়াকল্প আঁকতে আঁকতে হেঁটে যাওয়া এক জাদুকরীর হাত ধরে। খাড়াই পাহাড়ী পথের দুধারে ঝরঝর ঝরনা, কুলুকুলু শব্দে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদী, মে- ফ্লাওয়ারের ঝোপ, রূপোলি রঙে ঢাকা ছবির মতো বরফের পাহাড়ের ঢালুতে নেমে যাওয়া স্মৃতির শহরের পথ। পাকদণ্ডীর পথ।
লীলা পিসির হাত ধরে হেঁটে আসা সেই পথ ধরেই...

সত্যজিৎ রায়ের পিসি হন তিনি সম্পর্কে, সুকুমার রায় ছিলেন খুড়তুতো ভাই,উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী হতেন জ্যাঠামশাই। রায় পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ীই লেখা আর আঁকার হাতখানা পেয়েছিলেন বোধহয়। বড়দা সুকুমার যখন আবোল- তাবোলের ছবিতে তুলি বোলাতে বোলাতে বলতেন- একদিন তুইও এইসব করবি, অ্যায়সা আহ্লাদে আটখানা হয়ে খুব ঘাড় নাড়াতেন। কিন্তু তাঁর মূল বিশেষত্ব ছিল শিশুতোষ রচনায়। 'সারাজীবন আমি মনের মধ্যে গল্পগুলো যেমন ফুটেছে, তেমনিই সাজিয়ে দিয়েছি। জায়গা রাখিনি নকলের, চেষ্টা করিনি মাষ্টারি ফলাবার'; নিজেই বলেছেন এমন।
যদি কেউ বলে ছোটরা ভালবাসার গল্প বোঝে না, সে ভুল বলে। ভালবাসা দিয়ে মোড়া থাকে ছোটদের জগৎ, ভালবাসার মানুষকে হারানোর দুঃখ তারা যেমন বোঝে তেমন আর কেউ নয়।
তা, এত মায়ায় ছোটদের জন্য লিখেছেন আর কোন লেখিকা? এত সফটলি, এক্কেবারে ছোটদের মতো করে, ছোটদের মতো ভেবে একটা একটা শব্দ, একেকটা মুক্তোমালার বুনন আর আছেই বা কার, লীলা মজুমদার ছাড়া?

ছাত্রী হিসেবে ছিলেন তুখোড় মেধাবী। ���ড়েছিলেন ইংরাজিতে, বিএ এবং এমএ দুই পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। দার্জিলিঙে, শান্তিনিকেতনে এবং কলকাতায় অধ্যাপনার পর সেসব ছেড়ে তিনি মন দেন স্বাধীন সাহিত্যচর্চায়। বছর সাতেক বেতার প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন আকাশবাণীতে। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সম্পাদনায় ছিলেন দীর্ঘদিন।
লিখেছেন তিনি বড়দের জন্যেও, অনুবাদও করেছেন। আরো খাসা লিখতেন ইংরেজিতে, দখল ছিল তাতে আরো বেশি। বাংলাকে ভালবেসে মাড়ান সে পথ, মন সায় দেয়নি তাতে।

সুদীর্ঘ জীবনের নানা চড়াই- উৎরাইয়ের বিবরণকে জীবন্ত করে তুলেছেন তিনি খ্যাতনামা গ্রন্থ পাকদণ্ডীতে।
স্মৃতিচারণমূলক আর একখানা আত্মকথন আছে তাঁর, আর কোনোখানে। দুটোর গল্পই শিলংয়ের কুয়াশামাখা পাহাড়, মুঠো মুঠো চেরি, ন্যাসপাতির স্তুপ আর আর সরলগাছে ঘেরা শৈশব নিয়ে। স্মৃতিশক্তি ছিলো ঈর্ষণীয়, তাই পাহাড়ী শহরে কাটানো সেই নিরঙ্কুশ মায়ার শৈশব থেকে শুরু করে কলকাতা যাত্রা, শিক্ষাজীবন, বাবার সঙ্গে মতানৈক্য ও চিরবিচ্ছেদ, শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতা, সঙ্গ-নিঃসঙ্গতায় রবীন্দ্রনাথের সাহচযলাভ, সংসারজীবন ও সন্তানলালন, প্রাসঙ্গিকসুত্রে নারী স্বাধীনতা, দাম্পত্য ও আধুনিক নারীর কর্মজীবন নিয়ে নিজস্ব উপলব্দ্ধি--পাকদণ্ডীতে আছে সবকিছু নিয়েই ধারাবাহিক সযত্ন বিবরণ।

বর্ণনাভঙ্গি ও বর্ণাঢ্যতার গুণে অবশ্যপাঠ্য আত্মজীবনী। :)
Profile Image for Harun Ahmed.
1,277 reviews266 followers
March 31, 2022
৩.৫/৫
"...আমার দীর্ঘকালের এই সুখ-শান্তির সংসারের মধ্যিখানেও টের পাই আমার সত্তার অন্তঃস্থলে একটা জায়গা আছে যেখানে আমি একান্ত একলা। সেখানে আমি কারো মেয়ে নই, বোন নই, স্ত্রী নই, মা নই, বন্ধু নই । সেখানে আমার আমিত্বের সঙ্গে বোঝাপড়া করতেই জীবন গেল । কিন্তু তাতে আমার জীবনের স্বাভাবিক আনন্দগুলো উপভোগ করাতে কোনো অসুবিধাও হয়নি ! তবে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ঐসবের নীচে তলিয়ে গিয়ে শেষটা জীবনের আসল কাজটাই বাকি থেকে যাবে না তো ?"

লীলা মজুমদারের বর্ণাঢ্য জীবন,লেখিকা জীবন, জীবনদর্শন সম্পর্কে "পাকদণ্ডী "পড়ে অনেককিছু জানা গেলো, পাঠক হিসেবে সমৃদ্ধ হলাম কিন্তু অতিকথন প্রচুর। এই স্মৃতিগদ্যের প্রধান নেতিবাচক দিক হচ্ছে এর আয়তন। ৪৪৩ পৃষ্ঠার বই অন্তত দেড়শো পৃষ্ঠা কম হলে ভালো লাগতো।
পাহাড়ে কাটানো লেখিকার দুরন্ত শৈশবের অংশটুকু পড়ে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।লেখিকার পরিবার বিশেষত রায়পরিবারের কিংবদন্তি পুরুষদের বর্ণনা পড়েও নতুন করে মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু বইয়ের প্রথমদিকের এই আকর্ষণ শেষাবধি অক্ষুণ্ণ থাকে নি। তিনি সারাজীবনে যাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের প্রত্যেকেরই যথাসম্ভব বর্ণনা দিয়েছেন এবং তাদের পরিবারের কে কোথায় কী করছে তা-ও লিপিবদ্ধ করেছেন।এগুলো কি জীবনীতে থাকার আদৌ প্রয়োজন ছিলো?
কয়েকটি বিষয়ে লীলা মজুমদার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন যা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক :
১.লেখিকার পুরো পরিবার বেশ সৃষ্টিশীল, সহনশীল ও ভালো মানুষে ভরা। কিন্তু একসময় তিনি বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। পড়ালেখা শেষ করে তাই বাড়ি থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন শিক্ষকতা করতে।কোন সেই ব্যাপার যা মানুষকে সব ইতিবাচকতার ভেতরেও ক্লান্ত করে তোলে? লীলা মজুমদার এ ব্যাপারে খুব বেশি কথা খরচ করেন নি।
একমাত্র তার বাবা নিজের মতের বাইরে যেতে পারতেন না সেটার উল্লেখ আছে। লেখিকার বিয়েও তার বাবা মেনে নিতে পারেন নি। এই বিয়েটাও কি বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ?
২.রবীন্দ্রনাথের সময়কালের শান্তিন��কেতন মোটামুটি স্বর্গ ছিলো এটাই এতোদিন পড়ে এসেছি।এ বইতে মুদ্রার অপর পিঠ দেখা গেলো। একের কথা অন্যকে লাগানো, রবীন্দ্রনাথের কাছে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জল ঘোলা করা ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই অধ্যায়টাও সংক্ষিপ্ত���

৩.অতি বিখ্যাত মানুষের সন্তান হওয়া নাকি অভিশাপ।পদে পদে তুলনা এসে সন্তানের স্বাভাবিক জীবন বিষিয়ে দ্যায়। রবীন্দ্রপুত্র রথীন্দ্রনাথকেও বরণ করে নিতে হয়েছিলো এরকম এক জীবন।বাবার খ্যাতির পদভারে পিষ্ট ছিলেন তিনি।নানান কোন্দলে শেষজীবনে শান্তিনিকেতনেও থাকা হয়নি তার। লেখিকা তাকে "আপনার কি শান্তিনিকেতনের কথা মনে পড়ে না?" জাতীয় প্রশ্ন করে উত্তরদাতার চোখে জল দেখে নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। (রথীন্দ্রনাথের এই ভাগ্যচক্র নিয়ে কি ভালো কোনো বই আছে?কারো জানা থাকলে বলবেন প্লিজ!)

লেখিকা এক বিচিত্র,টালমাটাল, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে জন্মেছেন ও প্রত্যক্ষ করেছেন অনেককিছু।সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে তার স্মৃতিভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখিকা শুধু অল্প কিছু বাক্য খরচ করেছেন আর সাদামাটা বিষয়ে বিস্তর কথা বলেছেন।এজন্যই পুরো বইটা সমানভাবে উপভোগ করতে পারলাম না।
Profile Image for Meem Arafat Manab.
376 reviews214 followers
June 15, 2017
সব মিলায়ে মাঝারি একটা অনুভূতি হলো পড়ে। প্রায় মাঝারি।
লীলা মজুমদারের শৈশব স্মৃতি, না স্মৃতিটা নয়, আসলে স্মৃতির বর্ণনা, অসাধারণ। শিলঙের বৃত্তান্ত এবং তারপর তাদের বিশালাকায় পরিবারের জনগণের দৌরাত্ম্য একে একে কাগজের উপর দিয়ে ছুটে গেলো। অদ্ভূত সব ঘটনার পরোক্ষ সাক্ষী হওয়া গেলো এই বই পড়ে, কখনো ১০০ নং গড়পাড়ে, কখনো শহরের এ রাস্তায় সে রাস্তায়। বাঙালীদের স্মৃতিকথা পড়ে এই এক সুখ, ঘটনাগুলোরে আরো বেশি করে বাস্তব বলে ভ্রম হয়। ভ্রম বলি কেনো, বাস্তবই ত!
আবার ভালো লাগে নাই অনেক জায়গায়, অন্য কোনো কারণে নয়, স্রেফ ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম বলে, ওনার জীবনের বগি গুণতে গুণতে। এ কারণে নয় যে তিনি মাঝে মাঝে অলৌকিকে আস্থা রাখেন, এটা ত আর খারাপ লাগার কারণ হতে পারে না। তবুও এটা যে কেনো মনে পড়ে গেলো, কে জানে, হয়ত এটা একটা কারণ। না, আসলে যা কিছু ভালো লাগে নাই, তা আসলে তাঁ��� একরাশ মতামতের সাথে আমি সম্পূর্ণভাবে দ্বিমত বলে, জীবন সম্পর্কে মতামত, সাহিত্য সম্পর্কে মতামত, কিংবা মতামত ইংরেজি সাহিত্যের মূল্যায়ন নিয়ে, বাংলার কিছু কিছু লেখকেরে নিয়ে।

ল��খার বিচারে যদি বলি, তবে অনুভূতি মাঝারি বলা যায় না। বাংলায় বোধহয় তার এই বইয়ের মত এরকম বয়ানরেই বিশেষায়িত করতে গেলে পরে সুললিত বলতে হয়। আমি যদিও ওনার পরবর্তী জীবনের রোজনামচার চেয়ে প্রথম খণ্ডের সেইসব স্মৃতি, শৈশব, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকানোর আগের বৃত্তান্তরেই সামনে আগায়ে রাখবো। তবে, ওনার জীবনের দ্বিতীয়ার্ধ আমার অতটা ভালো না লাগায় ত আর ওনার কোনো হাত নাই।
আর তাছাড়া প্রথমে না হয় ছিলো বিপুলায়তন ইউ রায় এন্ড সন্স, কিন্তু শেষটায় ত ছিলো একটু একটু রবিঠাকুর, একটু একটু প্রেমেন মিত্র, একটূ একটু রেডিও সঞ্চালন। আর কার ঘাড়েই বা দুইটা মাথা যে ঐ আদি জমানার সন্দেশের দঙ্গলের সাথে পাল্লা দিতে যাবে!
Profile Image for Subah Alam.
8 reviews
March 25, 2019
"পাহাড়ের ঢালের ওপর বাড়ি। গেট দিয়ে ঢুকে কাঁকড় বিছানো পথ দিয়ে নেমে বারান্দায় পৌঁছতে হত। একহারা লম্বা বাংলো, সামনে ট���না বারান্দা, তার কাঠের রেলিং। বাড়ির তিনদিক ঘিরে বৃষ্টির জল যাবার জন্য নালা কাটা। তার ওপর দুটি চ্যাপ্টা পাথর ফেলা। তার ওপর দিয়ে বারান্দায় উঠতে হয়। বারান্দার ছাদ থেকে তারের বেড়ায় অর্কিড ফুল ঝুলত। তাদের তলায় সবুজ কাঠের বাক্সে জেরেনিয়ম ফুল ফুটত। লোকে এমন বাড়ি স্বপ্নে দেখে।"
কী মায়াময় লেখা! ছোটবেলায় হলদে পাখির পালক বা পদিপিসির বর্মিবাক্স পড়েই লীলার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ছোটদের জন্য কেন লেখেন সে বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, " ভালো লাগালাগির যে কোন সংগত কারণ থাকে না সে তো দুনিয়ার যাবতীয় ভালোবাসার গল্প পড়লেই বোঝা যায়। ছোটরা বই পড়ে বেঁচে থাকার জন্য, আনন্দের জন্য। এর বেশি কী দরকার?"
'পাকদণ্ডী' থেকে লীলা মজুমদারকে আরো চিনলাম। সবটাই যেন মায়া দিয়ে লেখা। এমন জাদুকরী মনোহরণ লেখা যে কী করে বেরুতো তাঁর কলম থেকে! মায়াময় শৈশবের গল্প, লীলা রায় থেকে লীলা মজুমদার হওয়ার গল্প পাকদণ্ডীর মতোই৷ যে পথ ঘুরে ঘুরে পাহাড়ে উঠে গেছে সেটাই পাকদণ্ডী। মেজো জ্যাঠামশাই ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। জ্যাঠামশায়ের বাড়ির বর্ণনায় লিখেছেন, "নিচে প্রেস চলতো, তার একটানা ঝমঝম শব্দ কানে আসতো৷ মনে হত বাড়িটা বুঝি দুলছে। যেকোনো সময়ে বাড়িটা ডানা মেলে পাখির মত উড়ে যাবে। সে বাড়ির রোমাঞ্চের কথা মুখে বলার সাধ্য নেই আমার।" বাড়ির সিঁড়িতে যে হাফ টোন ছবির নানা চকচকে প্রুফ পড়ে থাকতো সেগুলো মহানন্দে কুড়িয়ে আনতেন। জ্যাঠামশায়ের হাত ধরে যে প্রথম সন্দেশ ব��র��লো তাঁর মলাটের বর্ণনাও দিয়েছেন কী নিখুঁতভাবে! শৈশবের সমস্ত চিন্তাভাবনার কেন্দ্রে ছিল ওই রঙিন মলাটের হাফ টোনে ছাপা সন্দেশ। সেখানে লেখার লোভ হয়েছিল ছোট্ট লীলার। এরপর অনেকদিন পর বড়দা সুকুমারের নির্দেশে সন্দেশে লেখেন একটা ছোটগল্প। ছোটবেলায় তাঁর কোন বইয়ের ভূমিকাতে পড়েছিলাম - "আমার গোটা ছেলেবেলাকে আমি ছোটদের কাছে ধার দিতে চাই।" ধার তো দিয়েছেনই। তাঁর লেখা পড়ে যে আনন্দ পেতাম তার কোন তুলনা হয় না। 'আবোলতাবোলের একটা ছবিতে তুলি লাগাতে লাগাতে বড়দা সুকুমার একদিন বলেছিলেন, "তুই-ও এসব করবি, কেমন?" তিনি লিখেছেন "সেদিন আমার পনের বছর বয়স, স্কুলে পড়ি। শুধু এটুকু বুঝতে পারছিলাম বড়দা যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, সেই আমার পথ। আমাকে দিয়ে অন্য কোনো কাজ হবে না।" নিজের হাতের মশলাটা এভাবেই যোগ্য হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সুকুমার রায়।
রায় পরিবার থেকেই সম্ভবত লেখার গুণটা পেয়েছিলেন। ছোটদের জন্য ছোটদের মত করে কী অপরূপভাবে লিখেছেন তিনি! কোথায় যেন পড়েছিলাম যে লীলা মজুমদার আসলে ক্যালেইডোস্কোপের ডাকনাম, যা চোখে লাগিয়ে ঘোরাতে থাকলে অগুনতি রঙিন কাচের নকশা ফুটে ওঠে আজও। ছোটবেলার শিলং এর পাহাড়ঘেরা দিনগুলোর মত, ন্যাসপাতির ফুল, মে ফ্লাওয়ার আর গোলাপ ঝাড়ের ঘ্রাণের মত সুন্দর প্রিয় লীলা মজুমদারের আত্নজীবনী 'পাকদণ্ডী'।
Profile Image for Daina Chakma.
420 reviews713 followers
July 28, 2023
"পাহাড়ের ঢালের ওপর বাড়ি। গেট দিয়ে ঢুকে কাঁকড় বিছানো পথ দিয়ে নেমে বারান্দায় পৌঁছতে হত। একহারা লম্বা বাংলো, সামনে টানা বারান্দা, তার কাঠের রেলিং। বাড়ির তিনদিক ঘিরে বৃষ্টির জল যাবার জন্য নালা কাটা। তার ওপর দুটি চ্যাপ্টা পাথর ফেলা। তার ওপর দিয়ে বারান্দায় উঠতে হয়। বারান্দার ছাদ থেকে তারের বেড়ায় অর্কিড ফুল ঝুলত। তাদের তলায় সবুজ কাঠের বাক্সে জেরেনিয়ম ফুল ফুটত। লোকে এমন বাড়ি স্বপ্নে দেখে।"


কী ভীষণ মায়ামাখা লেখনী! লীলা মজুমদারের শৈশব কেটেছে 'হাই উইন্ডস' নামের এ�� স্বপ্নের বাড়িতে, শিলং শহরে। খুব ছোটকাল থেকেই বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে ভাইবোনদের বশ করে ফেলতেন। সেই ছিল শুরু। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন, লিখলে ���ো���দের জন্যই লিখবেন, ছোটদের জন্যই বাঁচবেন।

লীলা মজুমদারের জন্ম বিখ্যাত রায় পরিবারে। সেইসূত্রে লীলা হলেন সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি। সন্দেশ পত্রিকার জনক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী হতেন জ্যাঠামশাই। জ্যাঠ্যামশাই ছিলেন লীলার কাছে সুন্দর একটা ছবির মতো। এই বই দেখছেন, এই বেহালা বাজাচ্ছেন, এই ঈজেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছেন। ছবির মতো এই মানুষটিই ছোটবেলায় লীলার মন গড়ে দিয়েছেন। তবে হৃদয়ে গুরুর স্থান দিয়ে রেখেছেন বড়দা-কে। কোঁকড়া চুল, শীর্ণ গাল, তার উপর কোথায় একটা বড় আঁচিল - দেখে দেখে চিরকালের মতো সে দৃশ্য মনে আঁকা হয়ে গিয়েছিল। আবোলতাবোলের একটা ছবিতে তুলি লাগাতে লাগাতে বড়দা সুকুমার একদিন বলেছিলেন, "তুই-ও এসব করবি, কেমন?" সেই বড়দা সুকুমারের নির্দেশে একখানা ছোট গল্প লিখে দিলেন সন্দেশ পত্রিকার জন্য, ছাপাও হল। নিজে নাম দিয়েছিলেন ‘লক্ষ্মীছাড়া’, বড়দা বদলে রাখলেন ‘লক্ষ্মী ছেলে'। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি লীলাকে। ছোটদের জন্য লিখে গেছেন জাদুকরী সব গল্প। কী ভীষণ পেলব আর মায়ায় ভরপুর একেকটা গল্প! অথচ যার কলম এতো কোমল তাঁর ভেতরকার ভিতটা ছিল অসম্ভব পোক্ত আর অনড়। তখনকার নাম করা ডাক্তার সুধীন কুমার মজুমদারকে বিয়ে করে লীলা রায় হলেন লীলা মজুমদার। পাত্র হিন্দু হওয়াতে বেঁকে বসেছিলেন গোঁড়া ব্রাক্ষ্ম বাবা, প্রমদারঞ্জন। এভাবেই লীলার সাথে বাবার যোগাযোগ ছিন্ন হয় চিরকালের মতো।

ছাত্রী হিসেবে লীলা ছিলেন তুখোড় মেধাবী। ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর দখল ছিল ঈর্ষনীয়। বিএ এমএ উভয় পরীক্ষাতে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন কেটেছে দার্জিলিঙ, শান্তিনিকেতন এবং কলকাতায় অধ্যাপনা করে। রবিবাবুর টানেই বারবার ছুটে গেছেন শান্তিনিকেতনে। বেতার প্রযোজক হিসেবে আকাশবাণীতেও ছিলেন বছর সাতেক। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আজীবনের স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল অনেকের সাথে। সব ছেড়ে-ছুড়ে সাহিত্যচর্চায়-ও রত ছিলেন অনেকদিন। সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদনাও করেছেন। তাঁর উদ্যোগেই সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল 'সেরা সন্দেশ'। নিজে রচনা করেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। ক্লাসিক সাহিত্য অনুবাদে-ও পিছিয়ে ছিলেন না।

পাকদণ্ডী অর্থ যে পথ ঘুরে ঘুরে পাহাড়ের উপর দিয়ে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই নানা চরাই উৎরাই পেরুনো বিস্তৃত কলেবর আর সময়ের নানা বিবর্তনে লীলার বর্ণাঢ্য জীবনছবিকে এক শব্দে পাকদণ্ডী নামে আখ্যায়িত করা যায়। ভীষণ সুখপাঠ্য একটা বই!
January 30, 2023
আমাদের অনেকেরই ছোট বেলাটা মধুর কেটেছে রায় বাড়ীর তিন প্���জন্মের হাত ধরে। সেই পরিবারে জন্ম লীলা মজুমদার এর। তাঁর শৈশব কেটেছে পাহাড়ে জঙ্গলে বাবার কর্মসূত্রে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথের মতই জীবন কেটেছে। ছোট বেলারা সহজ সরল কাটলেও জীবনের চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে বহুবার, যার নমুনা এই বই।

লীলা মজুমদারের আত্মজীবনীমূলক বই "পাকদণ্ডী"। যেটুকু বয়সের কথা মনে থাকে, তার সাথে বড়দের থেকে শুনে সেই ছোট থেকে টুকরো টুকরো সব ঘটনা দিয়েই সাজানো এই বই। আর নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতন, রায় বাড়ীর ছোট বড় ঘটনা ও ব্যক্তিমানুষের কথা। একই সাথে সেই সময়ের বিখ্যা�� অনেকে আছেন যাদের সাথে সম্পর্ক অনেক সহজ ছিলো তাঁদের নানা ঘটনা লেখিকা তুলে ধরেছেন।

বইটা পড়ে কেউ কেউ বলেছেন ৪৫০ পেজের বইটা ২৫০ পেজে লেখা যেত। আমার মতে বইটা আরও ১০০ পেজ বেশী হইলেও ক্ষতি ছিল না।
সহজ ভাবে গল্প বলার মত করে একটা মানুষের স্মৃতি হাতড়ে অমূল্য কত কি উঠে এসেছে বইটা পড়লেই কেবল তা অনুভব করা যাবে।
Profile Image for Rumana Nasrin.
159 reviews7 followers
July 8, 2017
আসলে সাড়ে তিন তারা দেয়ার ইচ্ছা ছিলো। এই বইয়ের জন্য আমি মোটামুটি আমার আশেপাশের সবাইকেই অস্থির করে ফেলেছিলাম! রেগেমেগে সফট কপি পড়া শুরু করেও দিয়েছিলাম। অতঃপর সুপ্রিয় কলিগের বদৌলতে বই প্রাপ্তি এবং আমার আহ্লাদিত ইন্সটাগ্রাম পোস্ট! বইয়ের প্রায় সবই ভালো, অসাধারণ সাবলীল বর্ণনা। মায়াময় ভাষায় বলা স্বপ্নের মতো শৈশবের কথা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি, সুকুমার রায়ের কথা। বেশ তরতর করে পড়ে যাচ্ছিলাম।

যাই হোক (বইয়ের সব 'হোক' কেন যেন 'হক' হিসেবে ছাপা হয়েছে!), বিখ্যাত রায় পরিবারের বিখ্যাত কন্যার শৈশব, কৈশোর বেশ টেনে রেখেছিলো আমাকে। কিন্তু দেশের সব মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়া উচিৎ, বিয়ে না হলে তাঁরা নির্মম, নিষ্ঠুর হয়ে যান এই জাতীয় কথা পড়ে কেমন যেন তাল কেটে গেলো (যেহেতু আমারো বিয়ে হয়নি :/)

আর একটা ব্যাপার বরং আমার বড্ড চোখে লেগেছে, মানুষের বাহ্যিক চেহারাকে অসুন্দর বলা! তাঁর মতো একজনের কাছ থেকে আসলেই আশা করিনি।

ঐ আর কি, কিছুটা আশাহত আমি।

Profile Image for Ahmed Aziz.
306 reviews56 followers
November 30, 2022
বইটা পড়ে শেষমেশ হতাশ হলাম। শুরুটা অসাধারণ, শিলংয়ের পাহাড়ে শৈশব, স্কুল, কলকাতায় রায় পরিবার, কলেজ, পড়াশোনা, শিক্ষকতা, শান্তিনিকেতন, কবিগুরু সবকিছু নিয়ে স্বপ্নের মত প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব হুট করে শুরু হল বিয়ের বর্ণনা দিয়ে, কোনোরকম ব্যাকগ্রাউন্ড আলোচনা ছাড়াই। তাও ভালোই লাগছিল, নতুন জীবন, বাবার সাথে ছাড়াছাড়ি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পরিবার, বন্ধু, দুর্ভিক্ষ, ভারতের স্বাধীনতা পর্যন্ত ঠিকই ছিল। এরপরই বইটা ট্র‍্যাক হারাতে শুরু করলো, ভাঙা রেকর্ডের মত ছোটদের সাহিত্য আর বড়দের সাহিত্য, আপঝাপ লতায় পাতায় মানুষজনের বর্ণনা, বেতারের বিরক্তিকর ঘটনা, কার বোনের নাতনীর ছেলের সাথে কার বিয়ে হল টাইপ বর্ণনা সব মিলিয়ে চরম বোরিং পর্যায়ে চলে গেল, শেষ পর্যন্ত এরকমই থাকলো৷ এই পুরো সময়টায় সমকালীন সময়, ঘটনাবলী, বাংলাদেশ কোনো কিছু নিয়ে একটা শব্দও নেই, মনে হল জাস্ট হেলাফেলা করে লেখা।
Profile Image for Nusrat Faizah.
88 reviews33 followers
September 24, 2022
কয়দিন আগে ডিপার্টমেন্ট এর ট্যুরে সাজেক গিয়েছিলাম।বইটার কয়েক পাতা সেখানে পড়া উচিত ছিল।সাদা-নীল মেঘ আর সবুজ পাহাড়ের ল্যান্ডস্কেপ দেখতে দেখতে আর কফিতে চুমুক দিতে দিতে।এরকম স্নিগ্ধ একটা বই।
Profile Image for Trishia Nashtaran.
23 reviews135 followers
March 23, 2015
পাকদণ্ডী হলো পাহাড়ের গা বেঁয়ে উঠে যাওয়া আঁকাবাঁকা পথ। আত্মজীবনী লিখতে লীলা মজুমদার কেন এই নামটি বেছে নিলেন তা গল্প পড়তে পড়তে বোঝা যায়। পাহাড়ঘেরা শৈশব থেকে যাত্রা শুরু করে জীবনের বাঁকে বাঁকে লালিত একান্ত গল্পগুলো গভীর মমতায় দুই মলাটে বেঁধে নিয়েছেন তিনি। গল্পের শুরুটা পাহাড়ের কোলে বেড়া ওঠা শৈশব থেকে। ভীষণ স্মৃতিকাতর, মায়াঘেরা বর্ণনা থেকে সময়ের সাথে সাথে গল্প যত এগোয় তত চরিত্র আর ঘটনার ঘনঘটা বাড়তে থাকে। এত এত গল্প, এত এত চরিত্র লীলা মজুমদার কী করে মনে রেখেছেন ভেবে অবাক হই। মুগ্ধ হই তাঁর জীবনযাপনের একনিষ্ঠতায়, তাঁর রসবোধে। ঈর্ষা হয় তাঁর স্মৃতিশক্তিতে, সেই সাথে সেই স্মৃতির পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা অমূল্য সময়গুলোর বর্ণনায়। যে পারিপার্শ্বিকতায় তিনি বেড়ে উঠেছেন, যেই প্রবাদপ্রতীম মানুষগুলোর সংস্পর্শে তিনি বিকশিত হয়েছেন, তাঁদের বর্ণনায় যথাসাধ্য সুবিচার করতে তিনি সচেষ্ট থেকেছেন। গল্পচ্ছলে উঠে এসেছে তৎকালীন ব্রাহ্ম সমাজ ও হিন্দু সমাজের সামাজিক বিভেদের কালিক বিবর্তন, বাবার প্রতি অভিমানের কথা। এতটুকুও কটু শব্দ বা আবেগ প্রয়োগ না করে কী করে উষ্মা প্রকাশ করা যায়, সমালোচনা করতে হয় তা তাঁর সস্নেহ সচেতন ভঙ্গি থেকে চোখে পড়ে। বাংলা শিশুসাহিত্য বরাবরই খানিকটা অবহেলিত, কম জনপ্রিয় ধারা। উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সত্যজিতদের স্রোতে আজীবন একান্ত নিজস্ব ভালোবাসার জোগান দিয়ে গেছেন লীলা মজুমদার। এই ভালোবাসা, এই সাধনার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিলেও কম বলা হবে। নারী স্বাধীনতা, নারীর আধুনিকতা নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন লীলা মজুমদার। সেই সাথে বারবার এও বলেছেন যে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি থেকে পাওয়া মতামত। সময়ের বিবর্তনে তা অনেকাংশে প্রাসঙ্গিক না থাকলেও মুগ্ধতার তোড়ে পাঠকের মনে কিছু অযাচিত ভাবনা প্রোথিত হওয়ার আশংকা হয় এই অংশগুলো পড়লে। এ নিয়ে লীলা মজুমদারের উপর কিছুটা অক্ষম অভিমান জমে। তাতে অবশ্য তার কীর্তি মলিন হয় না এতটুকুও। শিলংয়ের পাহাড় আর সরলগাছে ঘেরা শৈশব, কলকাতার শহুরে জীবন, শান্তিনিকেতনের জীবনসাধনা, লেখালেখি, সংসার, মহাযুদ্ধ, দেশবিভাগ, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু, বেতারের কর্মজীবন সব মিলে এক বর্ণাঢ্য জীবনের সযত্ন ছবি পাকদণ্ডী। এত বিস্তৃত কলেবরে, এত এত সময়ের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বইটি পাঠককে এগিয়ে নিয়ে যায় যে একে একটি কালের সাক্ষী বলাই যায়।
Profile Image for Kumkum Ghosh.
18 reviews4 followers
May 25, 2022
এমন স্বপ্নের বাড়ি সবাই চায়..ঝর্ণা পাহাড় নদীর আওয়াজ.. কাঠের জাফরির ফাঁক দিয়ে বিকেলের রোদ এসে লুটোপুটি খাবে বারান্দায়। ইজিচেয়ারে বসে দূর দিগন্ত পানে চোখ যাবে আটকে..সময় থাকবে স্থির.. শুধু জল পড়ার শব্দ.. শিলং পাহাড় .. কবিতা যেখানে শেষের নয়..বাঁকের মুখে এখনও অমিত রে আর লাবণ্য র দেখা হয়...
শুধু অনুগামী পাঠক দুঃখিত হবেন এই জেনে প্রায় শতায়ু এই বরেণ্য লেখিকা লীলা মজুমদার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পুরোপুরি অ্যালজাইমার্স রোগে আক্রান্ত হয়ে বাই���ের পৃথিবীর সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন নিষ্ঠুর বিধাতা পুরুষের অঙ্গুলীহেলনে।এ এক বেদনার সময়.. কিন্তু ওনার সৃষ্টি কিশোর কিশোরীদের মনের মাধুরী সৃষ্টির কাজে চিরজীবী হয়ে থাকবে।
Profile Image for Dev D..
171 reviews23 followers
August 19, 2018
লীলা মজুমদারের আরেকটি আত্মজীবনী পড়ার সুযোগ ���য়েছিলো, সে ব��য়ের নাম আর কোনখানে। সেই বইয়ের প্রায় সবটুকু কথা এই বইয়েও আছে। তবে বড় হয়ে ওঠা পর্যন্তই ছিলো সেই বইয়ের পরিধি, এ বইয়ে কিন্তু ���র��� আছে বইটা লেখা পর্যন্ত গোটা জীবনটাই। তবে শৈশব, কৈশোর কিংবা তারুণ্যের স্মৃতিচারনা যতটা হৃদয়গ্রাহী, সংসার জীবনে ঢুকে যাওয়ার পর একজন মানুষের জীবনটা ততোটা আকর্ষনীয় আর বৈচিত্রপূর্ণ থাকে না। এটা অবশ্য সবার ক্ষেত্রে ঠিক হবে এমনও কোন কথা নেই। লীলা মজুমদারের জন্ম সেকালের সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে অগ্রগণ্য রায় পরিবারে। সারদারঞ্জন, উপেন্দ্রকিশোর, মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন আর প্রমদারঞ্জন ছিলেন ৫ ভাই।দুই বোন এর একজন থাকতেন ময়মনসিংহে, আরেকজন কলকাতাতেই যার স্বামী ছিলেন কুন্তলীন, দেলখোস প্রভৃতি প্রস্তুতকারী সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা। পিসিরা পড়াশোনা সেভাবে না শিখলেও তারাও ছিলেন সাহিত্যমনা। সবার ছোট প্রমদারঞ্জনের মেয়ে লীলা রায় (পরবর্তীতে মজুমদার)। প্রমদারঞ্জন ছিলেন জরীপ বিভাগের কর্মকর্তা, রাশভারী, বলিষ্ঠ, একরোখা মানুষটা। বছরের ছয় মাস বাইরে কাটাতে হতো তাকে বাকী সময় অফিস ছিলো শিলং এ, সে সূত্রে পরিবার থাকতো শিলং এ। সেকালের শিলং ছিলো ছবির মতো সুন্দর এক শহর, অবশ্য মানুষের ছোট বেলায় সব কিছুকে সুন্দর দেখার চোখ থাকে, তাই সামান্য জিনিসও মন কেড়ে নেয়। তবে শিলং তো আসলেই সুন্দর ছিমছাম শহর, তখন সেই শহর ছিলো আরও নির্জন, আরও শান্ত, জীবনযাত্রা ছিলো আরও মায়াময়। প্রমদারঞ্জন কলকাতা বদলী হওয়ার আগে পর্যন্ত লেখিকার শিলং বাস, বোধহয় প্রায় বছর এগার পর্যন্ত। তারপর কলকাতায় গিয়ে সেখানকার সংস্কৃতিমনা কৃতি সব আত্মীয় স্বজনদের সাথে মেশার সুযোগ হলো, শুরু হলো কলকাত্তাইয়া জীবন। মেজো জ্যাঠা উপেন্দ্রকিশোর এর নাম কে না জানে, তিনি অবশ্য ততোদিনে পরলোকগত। রায় পরিবারের এই মেজো ছেলেটিকে এক আত্মীয় দত্তক নিয়েছিলেন তাই বোধহয় সব ভাইদের নামের শেষে যেখানে রঞ্জন সেখানে এনার নামের শেষটা দত্তক নেয়া পিতার নামের সাথে মিল রেখে কিশোর। উপেন্দ্রকিশোর এর বড় ছেলে সুকুমার, মেয়ে পূণ্যলতা, সুখলতা, মেজো ছেলে সুবিনয় এরা সবাই সন্দেশের পাতায় লেখালেখি আঁকাআাঁকি করেছেন। ছোট জ্যাঠা কুলদারঞ্জনও এককালে বেশকিছু অনুবাদ বই লিখেছিলেন। মায়ের দিক থেকে হিসেব করলে দাদা মশাই রামানন্দ স্বামী সেই কবে হিমারণ্য লিখে গিয়েছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, দিদিমার মৃত্যুর পর দাদামশাই যখন তিনটি শিশু কন্যাকে ফেলে সন্ন্যাসী হয়ে গেলেন তখন তার পিতৃ বা শ্বশুরকূলের কেউ মেয়ে তিনটিকে কাছে টেনে নেন নি। বড় জনকে চলে যেতে হয় বোর্ডিং স্কুলে, মেজো মেয়ে সুরমা যিনি লীলা মজুমদারের মা, তার ভার নেন উপেন্দ্রকিশোর আর সব ছোটজনকে মানুষ করেন শিবনাথ শাস্ত্রীর পরিবার। রামানন্দ এককালে ব্রাহ্ম হয়েছিলেন বলে এই শাস্তি তার আত্মীয় স্বজন দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বংশগত না হোক, পরিবেশগত কারণে লীলা মজুমদার লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সুকুমার রায়ের প্রভাব তার উপর ছিলো খুব বেশি। সুকুমার রায়ের অকালমৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা বেশিদিন টেকেনি, লীলা মজুমদারের লেখালেখিতেও কিছু ছেদ পড়ে এই কারণে। পড়াশোনায় বরাবর ভালো ছিলেন তিনি। তবু চাকরী বাকরী বা উচ্চতর ডিগ্রীর প্রতি বিশেষ ঝোক তার ছিলো না। অধ্যাপনা কিছুকাল করেছেন দার্জিলিং এ মেয়েদের একটা স্কুলে, শান্তিনিকেতনে, অাশুতোষ কলেজেও। তবু এর কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী কিছু ছিলো না। বাবার অমতে বিয়ে করে চিরকালের জন্যে বাপ মেয়ের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। ব্রাহ্ম প্রমদারঞ্জন, লীলার হিন্দু মতে হিন্দু পাত্রের সাথে বিয়ে কখনো মেনে নিতে পারেন নি, যদিও তাদের পুরো পরিবারের অর্ধেকই হিন্দু ছিলেন এবং উপেন্দ্রকিশোর���র পরিবার ছাড়া আর কেউ দীক্ষিত ব্রাহ্মও ছিলেন না। বিয়ের পরেও লীলা বিভিন্ন সমাজ সেবা মূলক সংস্থায় জড়িয়েছিলেন যার বেশিরভাগই ক্ষণস্থায়ী, তাছাড়া প্রায় বছর সাতেক কলকাতা বেতারের সাথেও জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে চলেছে তার সাহিত্যচর্চা, ছোটদের জন্য তো বটেই, লিখেছেন বড়দের জন্যও। দীর্ঘ বিরতির পর সুকুমার পুত্র মানিক ওরফে সত্যজিৎ যখন নতুন করে সন্দেশ প্রকাশ শুরু করেন তার সাথে লীলা মজুমদারও জড়িয়ে পড়েন। তবে আত্মজীবনীতে একটি দূর্বলতা চোখে পড়েছে। তার সমকালীন অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সেরকম কোন উল্লেখ নেই। কলকাতার ছেচল্লিশ এর দাঙ্গা, স্বাধীনতা, উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে আরও বেশি বর্ণনা থাকলে ভালো লাগতো। সবমিলিয়ে সেকালের এক মূল্যবান দলিল এই বই, লেখিকার স্মৃতিশক্তির বাহবা অবশ্য একশোবার দিতে হয়।
Profile Image for Tanjina Tamanna.
99 reviews20 followers
May 13, 2017
পাহাড়ের খাড়াই ওঠার পথটা যতই কঠিন ,কষ্টকর হোক না কেন তার বাঁকে বাঁকে যে বুনো ফুলের মায়া,দুদিকের গাছের আঁকড়ানো ছায়া থাকে তা হাঁপ ধরানো ক্লান্তির মাঝেও প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।কখনো গন্তব্যে পৌছে কেউ ,আবার কখনো গন্তব্যে পৌছতে না পারলেও সেই মায়ামাখা পথে যাত্রার স্মৃতিকে পুঁজি করেই গন্তব্যস্থানে না পৌছতে পারাকে দুঃখ মনে হয় না। পাকদণ্ডীর মতই জীবন আমাদের।কত চড়াই উৎড়াই,কত বেদনার পরেও ছোট ছোট সুখের মূহুর্তগুলো সেই বেদনাগুলোর চেয়ে বড় হয়ে উঠে আমাদের কাছে।পাকদন্ডী লীলা মজুমদারের এক অপূর্ব আত্মজীবনী। তাঁর অপূর্ব লেখনীতে,গলপ বলার ছলে ,মজলিশি কায়দায় এক মায়াময় শৈশবের ,এক ঘটনাবহুল জীবনের আখ্যান।এ কথা সত্য যে রায় পরিবারের লেখনী,সৃষ্টিশীলতা যেন উত্তরাধিকারসূত্রেই পেয়েছিলেন। এবং তাকে লালন করে,চর্চা করার ফসল তাঁর সাহিত্যকর্ম। এই আত্মজীবনীকে তথ্যবহুল না করে বরঞ্ছ মনের দৃষ্টি দিয়ে লিখেছেন বলেই এত বেশি জীবন্ত মনে হয় সুদীর্ঘ জীবনীটি।শিলংয়ের প্রকৃতি, পাহাড়,,বন ,ঘাসজমি,আঁকাবাঁকা নদী, সন্দেশের ছবি আর গলপঘেরা শৈশবের যাত্রা পড়বার সময় এক অজানা মায়া যেন সম্মোহিত করে রাখে।এরপর কলকাতা যাত্রা, শিক্ষাজীবন, শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতা, রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য, বুদ্ধদেব বসুর সহ অনেক গুণী মানুষদের সাথে পরিচইয়,সংসারজীবন ,কর্মজীবন সব কিছুর প্রেক্ষাপটে নানা ঘটনার অপূর্ব বিবরণ।
Profile Image for Amlan Hossain.
Author 1 book65 followers
May 10, 2017
আত্মজীবনীতে ঠিক কী আশা করি? অকপটতা তো সবার আগে। সরসতার সঙ্গে ইতিহাসের একটা সময়কে ধরে রাখার ব্যাপারটাও ঠিক এর পরেই চলে আসে। পাকদন্ডী বইটাতে দুই ও তিন নম্বর উপাদান একেবারে ষোল আনা থাকলেও প্রথমটার যেন কিছুটা খামতি আছে। এক ঠাকুর পরিবার বাদ দিলে বাঙালি মননের ওপর বোধ হয় রায় পরিবারের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সত্যজিতই আমাদের ছোটবেলার, বড়বেলার সঙ্গী। সেই রায় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে লেখক অনেক কিছুই দেখেছেন খুব কাছ থেকে। ছেলেবেলায় জ্যাঠামশায় উপেন্দ্রকিশোর , বড়দা সুকুমার, আর বড় হয়ে ভাইপো মানিককে দেখেছেন একেবারে কাছ থেকে। তবে এঁদের বাইরেও রায় পরিবারে আরও বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং চরিত্র আছে। লীলা মজুমদারের নিজের ঠাকুরদা বা উপেন্দ্রকিশোরের বড় ভাই সারদারঞ্জন, ছোট ভাই প্রমদারঞ্জনের নামই বা কজন শুনেছে? সুকুমার, উপেন্দ্রকিশোরের রক্ত তো লীলা মজুমদারের শরীরেও আছে, লেখার ভাষাও তাই দারুণ সরস, হৃদয়গ্রাহী��� কিন্তু কখনো কখনো মনে হয়েছে লেখক কিছু কিছু ব্যাপারে একটু সমালোচনা করতে গিয়েও চেপে গেছেন। লেখকের কাছে সকলই শোভন, সকলই নব��ন বটে, কিন্তু কেন যেন মাঝে মাঝে সেসব মনে হয়েছে আরোপিত। এটুকু খচখচানি বাদ দিলে এই বইটা আপনি সাগ্রহে পড়ে ফেলতে পারেন।
July 4, 2021
প্রথম পর্বটি খুব সুন্দর লাগলো। পড়ে জীবনকে খুব সহজ সরল বলে মনে হয়। মন হালকা হয়ে যায়।
দ্বিতীয় পর্বটিতে ��েই সরল আনন্দগুলির একটু অভাব। তবে হয়তো সেটাই স্বাভাবিক সব জীবনের ক্ষেত্রে।
Profile Image for Tanzima Rahman.
69 reviews2 followers
September 20, 2023
বেশ সময় নিয়ে পড়লাম। লীলা মজুমদারের এই আত্মজীবনিতে সে সময়কার অভিজাত বংশীয়দের জীবনের নানান বাঁক আর সুশীল সমাজের জন্ম নেওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সাহিত্যের যে বিকাশ ধারা, তার স্পষ্ট রূপরেখা লীলা মজুমদারের লেখায় বার বার ধরা দিয়েছে।
Profile Image for Farjana Rahman.
15 reviews1 follower
August 17, 2024
বই: পাকদন্ডী
লেখক: লীলা মজুমদার
প্রকাশনী: আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
ধরন: আত্মজীবনী
পৃষ্ঠা: ৪৪৩
মুদ্রিত মূল্য: ৪০০ রূপী।

লীলা মজুমদারের "পাকদন্ডী" নিয়ে বলতে গেলে লেখিকা এবং বই - দুয়ের বেলাই কিছু কমন কথা এসে যায়। তা হলো - সরল, বলিষ্ঠ, অসঙ্কোচ এবং সুন্দর। শিলংয়ে শীতের শেষে লীলা মুজুমদারের ভাষায় "নীল আকাশের গায়ে নাসপাতির ডালের কংকাল দেখতে ভারি অদ্ভুত লাগত" - এহেন প্রকাশে "অদ্ভুত" অনুভূতির সাথে "আনন্দ" যে সংযুক্ত - পাঠক মাত্রের সেই বোধ আত্মস্থ করতে মোটেও কষ্ট করা লাগবে না। "পাকদন্ডী" যদিও কংকাল নয়, নিছক আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা নয়, বরং ফেলে আসা সময়ের কংকালে স্মৃতির পর স্মৃতির রক্ত-মাংসের প্রলেপে সম্পূর্ন একটা অবয়ব।

"পৃথিবীর ভালোবাসার জায়গাগুলো অর্ধেক মাটি দিয়ে গড়া আর অর্ধেক মনগড়।" লীলা মজুমদারের এহেন সমৃদ্ধ, গভীর জীবনদর্শন আমাদের চমকে দেয় না, বরং অন্যরকম এক আবেশে আবিষ্ট করে রাখে। "পাকদন্ডী" কতটুকু মনগড়া সে প্রশ্ন আপেক্ষিক - স্মৃতি মানেই কিছুটা সময়ের হেরফের অবশ্যই। তবে এই আত্মজীবনীতে অর্ধেক বলে কিছু নেই। সম্পূর্নটাই ভালোবাসা এবং লীলা মজুমদারীয়।

লীলা মজুমাদারের জন্ম ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ১৯০৮। তার জ্যাঠামশাই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়িতে। "বনের খবর" বইয়ের প্রণেতাপ্রমদারঞ্জন রায় তার পিতা। স্বামী ডাঃ সুধীরকুমার মজুমদার। সহজেই অনুমেয় যে বিবাহ-পরবর্তী সময়ে লীলা নামের সাথে মজুমদার যুক্ত হয়েছে, যেটা পূর্বে ছিল রায়। রায় পরিবারের তিনটি প্রজন্মের সাথে ওঠাবসা ছিল লীলা মজুমদারের। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় থেকে সত্যজিৎ রায় - মাঝে আরও অজস্র নক্ষত্রদের মাঝেই বিচরন করেছেন এই লেখিকা। "পাকদন্ডী" তার আত্মজীবনী এবং এই বইয়ের জন্যেই তিনি পেয়েছিলেন রবীন্দ্রপুরষ্কার।

পাকদন্ডী কি? পাকদন্ডী হচ্ছে পাহাড়ের খাড়াই ওঠার জন্যে সাপের মতো আঁকা-বাঁকা পথ। "পাকদন্ডী" আত্মজীবনী তো আক্ষরিক অর্থেই সাপের মতো আঁকা-বাঁকা পথ বেয়ে যতটুকু বলা যায় সেই শিখরের দিকে যাত্রা। চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে কখনও এগিয়ে আবার কখনো স্মৃতির পিচ্ছিল ঢালে পিছিয়ে পৌছে যাওয়া সেই লক্ষ্যে। এই যাত্রাপথে পথের চারপাশে অজস্র ফুলের মতো যেমন এসেছে অজস্র রথী-মহারথীদের কথা, তেমনি অনেক ঘটনাপরম্পরাতেও আকীর্ন লীলা মজুমদারের আত্মজীবনী "পাকদন্ডী"।

"পাকদন্ডী" দুই খন্ডে বিভক্ত। ১ম খন্ড শুরু লোরেটো কনভেন্ট স্কুল থেকে যেখানে লীলা রায়ের পড়ালেখা শুরু। শিলংয়ের পাহাড়ঘেরা শৈশব আর তার আসাধারন বর্ননায় ঘেরা এই অংশটুকু। যার বিস্তৃতি শান্তিনিকেতনের ১ বছর অধ্যাপনা শেষে চাকরি ছেড়ে আবার কলকাতায় ফেরা পর্যন্ত। ২য় খন্ড শুরু লীলা রায়ের বিবাহ শুরুর ঘটনা দিয়ে এবং জীবনের বাকি অংশটুকু এই খন্ডে জড়িয়ে আছে। সাথে দেয়া আছে সাদাকালো কিন্তু দূর্লভ কিছু ছবি। ছবির সংযোজনগুলো পাঠকের জন্যে বাড়তি পাওয়া হয়ে থাকবে।

ঘটনাপরম্পরাতে প্রচুর জানা ও অজানা কথা উঠে এসেছে এই বইতে। উপেন্দ্রকিশোরের কথা, যুদ্ধের সময় বিদেশ থেকে ওষুধপত্র আসা বন্ধের কারনে তার মৃত্যু, বাবা প্রমদারঞ্জন রায়ের মৃ/ত্যুর পরে তার ডায়েরি থেকে তুলে "বনের খবর" সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হবার গল্পগুলো সেই ঘটনাপরম্পরার অংশবিশেষ। বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আগমন, রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা, বুদ্ধদেব বসুর সাথে পরিচয় এবং এমন অজস্র সব মানু��ে�� ভিড়ে লীলা মজুমদার বেশ সরল এবং নির্মোহভেবেই তুলে ধরেছেন নিজেকে এই বইয়ে। ১ টাকা দিয়ে একটি অটোগ্রাফ খাতা কিনে তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দিয়ে কিছু লিখিয়ে আনার প্রাক্কালে কবি সেখানে লিখেছিলেন, - "নামের আখর কেন লিখিস আপন সকল কাজে? পারিস যদি প্রেমের আখর রাখিস জীবন মাঝে।" পাকদন্ডী সেই "প্রেমের আখর" হয়েই পাঠকের জন্যে এক অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে নিঃসন্দেহে।

রায় বাড়ীর তিন প্রজন্মের মোটামুটি সবার কথাই লিপিবদ্ধ আছে পাকদন্ডী-তে। লেখিকার বয়ানে, "ছোটবেলার স্মৃতি সব ভাঙা ভাঙা, একটা দুটো টুকরো কথা, অসমাপ্ত ঘটনা মনের মধ্যে লেগে থাকে।" অসমাপ্ত ঘটনার মতোই অজস্র স্ন্যাপশটে সাজানো এই আত্মজীবনী "অসমাপ্ত” হয়ে ওঠার অতৃপ্তি দেবে না। কারন স্মৃতি তো এমনই - বিচ্ছিন্ন ইটগুলো একের পর এক গেঁথে পুরো একটা স্মৃতির দেয়াল তৈরী করা। সেই দেয়ালে রায় পরিবারের সকলের কথা ছাড়াও আছে লেখিকার সাহিত্য নিয়ে ভাবনা, তার লেখিকা হয়ে ওঠার জার্নি এবং শান্তিনিকেতন ও রবীন্দ্রনাথের অনেক ঘটনার ছবির শাব্দিক চিত্র। নারীর আধুনিকতা, স্বাধীনতা, প্রখর মেধাবী ছাত্রী হয়ে পরীক্ষা বিষয়ক ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি এবং সেই প্রসঙ্গ ঘীরে বিদ্যাসাগর, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকের নানা ঘটনার ফ্রেমও টানানো হয়েছে "পাকদন্ডী" নামক দেয়ালে।

শিলংয়ের পাহাড় ঘেরা শৈশব থেকে শুরু করে কলকাতার শহুরে জীবন এবং সেই বন্ধনীর মধ্যে দিয়ে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ, ২য় মহাযু/দ্ধ, দেশবিভাগ, শিশুসাহিত্য, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ও কল্লোল যুগের শুরু - সব কিছু মিলে "পাকদন্ডী" হয়ে উঠেছে সময়ের একটি বিশেষ দলিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ঠিক সেই মূহুর্তে উপস্থিতও ছিলেন তিনি। "রবীন্দ্রনাথের কাব্যে সমুদ্র্ ও পাহাড় বিষয় প্রায় অুনপস্থিত" [আব্দুল মান্নান সৈয়দের "বিষ্ণু দে" বিষয়ক প্রবন্ধে এবং আরও কিছু লেখায় এর বিস্তর ব্যাখ্যা আছে] -উক্ত ধারনার একটা সরাসরি যোগসূত্র পাই লীলা মজুমদারের বর্ননায়, যেখানে কবি তাকে বলেছেন, -" তারপর একদিন রবীন্দ্রনাথকে বলতে শুনলাম, পাহাড় আমার ভালো লাগে না।"
বর্ণাঢ্য ও সরল এক জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন "পাকদন্ডী"। যেই সরল গাছেও হাওয়ায় বেড়ে উঠেছেন লীলা মজুমদার, সেই সরলতাও মিশে আছে পাকদন্ডীর প্রতিটি পৃষ্ঠা জুঁড়ে। বইয়ের থেকে অনেক কিছুই তুলে আনার থাকলেও আপাতত একটা অংশই তুলে ধরি -

"একটা পিচ গাছ ছিল, তার গোলাপী ফুল; প্লামে�� সাদা ফুলও সুন্দর; কিন্তু ন্যাসপাতির ফুলের কাছে কেউ লাগত না। মনে হত গাছ-তলায় কে সাদা সুগন্ধী গালচে্ পেতে রেখেছে, রোজ রাশি রাশি পাপড়ি ঝরে পড়ত। শেষটায় একদিন সব ফুল ঝরে যেত, গাছে ডালে ছোট ছোট ফলের গুটিগুলো ন্যাড়া হয়ে দেখা দিত। সঙ্গে সঙ্গে সারা শীত ঘুমিয়ে থাকা পাতার কুঁড়িও ফুটে গিয়ে , কচি ফলের মাথায় চাঁদোয়া বানিয়ে তাদের ঠান্ডা হাওয়া , হঠাৎ ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা করত। ফলগুলো কিন্তু বেজায় শক্ত, কষা, বিশ্রী। গাছে চড়ে কামড়ে খেয়ে দেখেছিলাম। সেই ফল পাকতে ভাদ্র মাস পড়ে যেত। তখন কমলালেবুর চাইতে বড়, নিটোল সোনালী ফলের ভারে ডালগুলো নেমে আসত মাটির কাছাকাছি। আমি, নোটন, সরোজ এরাও পেড়ে খেত। সোনালীর উপর সাদা সাদা খুদে ফুটকি, রসে ভরপুর, খেতে মধু। একটু ���্যাচ-ক্যাচ করত বটে, কিন্তু নিখুঁত জিনিস পৃথিবীতে কোথায়ই বা আছে?"

নিখুঁত জিনিস পৃথিবীতে কোথায়ই বা আছে? বিস্তৃত সময়ের বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আঁকা-বাঁকা পথে এবং বিশাল কলেবরে লেখা "পাকদন্ডী"র মধ্যেও হয়তো খুঁত আছে। তবে সেটুকু পাঠকের মধ্যে কোন প্রকারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বা মুগ্ধতার পারদটুকু নামাতে তাতে ঠান্ডা জলও ঢেলে দিবে না। বইয়ের ১ম খন্ড যতটা উজ্জ্বল এবং মোহনীয়, ২য় খন্ড ততটা না। সেটা হওয়াই স্বাভাবিক, কারন জীবন তো এমনই! তবে প্রাসঙ্গিকতা থাকায় এটা বলা প্রয়োজন যে, "পাকদন্ডী" প্রকাশের আগে লীলা মজুমদারের আর একটি অসাধারন স্মৃতিকথা "আর কোনখানে" প্রকাশিত হয়। উক্ত বইটিও সমানভাবে সমাদৃত এবং বিখ্যাত। যদিও সেই স্মৃতিচারণায় শুধুমাত্র একটা বিশেষ সময় পর্যন্ত ধরা আছে। পাকদন্ডী সেখানে তার সম্পূর্ন জীবনের চিত্র। যেটা বলবার - "আর কোনখানে" এর অলমোষ্ট পুরটাই পাকদন্ডী বইয়ের ১ম পর্বে তুলে ধরা আছে। "আর কোনখানে" তে কিছু অসাধারন চিত্রকল্পের বর্ননা ব্যাতিরেক বাকি সব কিছুই পাবেন পাকদন্ডী-এর ১ম পর্বে। সেক্ষেত্রে পাঠক চাইলে "আর কোনখানে" না পড়লেও চলে। তবে লীলা মজুমদারের সরস বর্ননা ও নিজস্ব লেখনী জাদুতে সেটাও হয়তো অনেক পাঠকের কাছে বিরক্তিকর লাগবে না। আমার কাছে লাগে নি - দুটোই সমানভাবেই উপভোগ করেছি।

যারা "অক্ষয় মালবেরি" পড়েছেন মণীন্দ্র গুপ্তের, তারা তো জানেনই লেখক কোন ক্যালিডোস্কোপে দেখেছেন সেই জীবন। পাকদন্ডীও সেই ক্যালিডোস্কোপ এর ঘোর। শুরুতেই ন্যাসপাতি গাছের কংকালের যে বর্ননা দিয়ে শুরু তার সাথে "অক্ষয় মালবেরির" একটা অংশের কিছু সাদৃশ্য দেখি -

"একটা ঝুঁকে পড়া গাছের অদ্ভুত আঁকাবাঁকা ডালের খানিকটা টলটলে জলের মধ্যে ডুবে আছে সেখানে উড়ন্ত নীল আকাশ আর উড়ো সাদা মেঘের ছবি যেন জলের মধ্যে নীল ময়ূর আর সাদা ময়ূরীর নাচ।"

অক্ষয় মালবেরি মেলানকলিক বিউটি। অনেকটা বিষণ্ণ ও নিঃস্তব্ধ। সেখানে পাকদন্ডী ন্যাচারাল বিউটি। কোলাহলে পরিপূর্ণ এবং মুখর। বিষণ্ণতা শুধুমাত্র কিছু নক্ষত্রের পতনের শব্দে। কবি সুধীন দত্তের সাথে লীলা মজুমদারের বন্ধুত্ব
শান্তিনিকেতনে। তার রূপ দেখে লীলা মজুমদার হাঁ হয়ে গিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বললেন, "মনে রেখো, ও বিবাহতি এবং খটমটে কাব্য রচনা করে।" সেই কবি সুধীন দত্ত কোন এক সন্ধ্যায় কফি খেতে খেতে লীলা মজুমদারকে বলেছিলেন, কফি কেমন হওয়া উচিৎ বলব-

"ডার্ক অ্যাজ দ্য ডেভিল, হট অ্যাজ হেল, অ্যান্ড সুইট অ্যাজ সিন।"

পাকদন্ডী কফি না। লীলা মজুমদারের আত্মজীবনী। ডেভিলও না, হেলও না। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানা ঘটনার অপূর্ব বিবরণ এবং নিজস্ব সৃষ্টিশীলতায় মুখর এক জীবনদর্শন - এক কথায় "সুইট"।

লীলা মজুমদারের আত্মজীবনী "পাকদন্ডী" আনন্দ পাবলিশার্স(ভারত) থেকে জানুয়ারি ১৯৮৬ তে প্রথম প্রকাশিত হয়। বই আকারে প্রকাশে��� পূর্বে "অমৃত" নামক পত্রিকায় প্রতি সপ্তাহে তিন পৃষ্ঠা করে প্রকাশিত হত। পাকদন্ডীর আগা-গোড়া পুরোটাই শান্তিনিকেতনে বসেই লেখা। লীলা মজুমদারের "সারা জীবন একটা চলচ্চিত্রের রিলের মতো মনের সামনে খোলা থাকে" অভিব্যক্তির মতোই পাকদন্ডী পাঠকের সামনে সময়ের একটি খোলা দলিল হয়েই আছে।

লীলা মজুমদার যেমন "যা পাইনি তা নিয়ে দুঃখ নেই, যা পেয়েছি তা দিয়েই মন ভরে আছে" বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন, নিঃসন্দেহে পাঠকও "পাকদন্ডী"র পথে চলতে চলতে খাড়াই ওঠার জন্যে সাপের মতো আঁকা-বাঁকা পথ বেয়ে যা পাবেন - তা দিয়েই মন ভরে থাকবে।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 36 books1,688 followers
May 2, 2013
This innocuous-yet-multi-layered reminiscences of one of the greatest Bengali writers of the 20th Century is a valuable historical document, as well as a literary gem in itself. Despite all the procrastinations that our leaders and self-styled intellectuals make, women shy away from making their thoughts & feelings open to others in the form of a book. And yet, this legendary writer did so with an incredible freshness, despite the rigidly conservative milieu in which the book had been written. My only nagging point is that, since this book had dealt with her grown-up and adult years to a far greater extent than in her previous autobiographical work, it had less of humour and more of pain & loneliness. Nevertheless, this is a seminal work in Bengali literature, and is highly recommended.
Profile Image for Angira Datta Dandapat.
28 reviews5 followers
January 13, 2023
আমার ছোটবেলা অনেকাংশে কেটেছে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় এবং লীলা মজুমদারের লেখার সঙ্গে, হাইস্কুলে এনাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। মোটের ওপর রায় বাড়ীর তিনটি প্রজন্মের সাথে সাখ্য বহুদিনের। লীলা মজুমদারের সূক্ষ্ম হাস্যরস সমৃদ্ধ গভীর জীবনদর্শন এবং ঐতিহ্যগত আভিজাত্যের আকর্ষণ তার লেখার পাঠকমাত্রই সুপরিচিত। ওনার মননের সঙ্গে লেখার মাধ্যমে পরিচিত হলেও, ওনি ছোটবেলা থেকে ওনার লেখার মাধ্যমে আপনজন হলেও ব্যক্তিমানুষটির প্রতি আকর্ষণ ছিল বহুকাল থেকেই। 'পাকদণ্ডী' বইটিতে চিনলাম ব্যক্তি মানুষটিকে, আরও যেন আপন হলেন উনি। অটোবায়োগ্রাফির প্রতি পাঠকদের আকর্ষণ চিরকালীন, প্রিয় লেখকের কলমের পথ বেয়ে ব্যক্তিমানুষটিকে জানার আগ্রহ, জীবনের খুটিনাটির প্রতি আগ্রহ আসলে মানুষটিকে চেনার এবং নিজের কল্পনার সাথে মিলিয়ে দেখার প্রচেষ্টা।
পাকদণ্ডী বইটি সার্থক অটোবায়োগ্রাফি, লুকোছাপাহীন এক সার্থক জীবননামা।

শিলং এর কুয়াসামাখা হিমালয়, দিগন্ত বিস্তৃত সরলবর্গীয় গাছগাছালির সমারোহ, স্থানীয় নিরীহ পাহাড়ি মানুষজন, কয়েকঘর প্রবাসী বাঙালী পরিবার, মিশনারী স্কুল এবং প্রকৃতির মাঝে সহজ শৈশব জীবনের বিবরণ যেন তরতর করে এগিয়ে চলা প্রাণোচ্ছল পাহাড়ি নদী। মাঝেমাঝে কোলকাতায় আসা, রায় বাড়িতে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বড়দা সুকুমার রায়ের পরিবারে। যৌথ এক সচল পরিবার, যেন গমগম করছে। সেই সচলতার আভাস পায় পাঠকও। সবই সুখের নয় অসুখও, কেড়ে নিয়েছে পরিবারের ভারকেন্দ্র কে, ছোট্ট সত্যজিৎ তখন মায়ের কোলে। হাসি আনন্দের পরিবার, সাহিত্য সঙ্গীতে মুখরিত বাড়িতে নেমে এসেছে ঘনঘোর নিস্তব্ধতা, ছারখার হয়েছে পারিবারিক ভিত, ব্যবসা, প্রেস, ছিটকে গেছে স্বজনেরা,--- এমনটাই তো জীবন, পাশাপাশি চলতে থাকে আনন্দ -বেদনা, জীবন এগিয়ে চলে।
কলমের প্রতি লীলা মজুমদারের সততা অপরিসীম, পিতার প্রতি পুত্রীর ক্ষোভ অভিমানের জায়গাটা অসাধারণ নির্লিপ্ততায় ব্যক্ত করেছেন, সারা জীবন যে তাদের বাক্যালাপ বন্ধ ছিল তা অস্বীকার করেননি। শান্তিনিকেতনে রবি ঠাকুরের সান্নিধ্যে এক বছর অধ্যাপনা, এবং সেখানকার কিছু বিষয়ে বিরক্ত হয়ে ফিরে আসা, বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হারানো, বাড়ির অমতে বিয়ে সবটাই লিখেছেন অস���্ভব দৃঢ়তার সঙ্গে।
গভীর জীবনবোধের সাথে স্বচ্ছ মননের ছাপ রেখে গেছেন উনি, সেটাই কী স্বাভাবিক নয়? কতটা সরলতা ভেতরে থাকলে লেখা যায়--
'নিউ মার্কেটে ঢুকে হকচকিয়ে গেলাম। একি পরীদের দেশ? প্রায় বারো বছর বয়স, ইংরিজি সাহিত্যের মেলা বই পড়ে ফেলেছি কিন্তু কাপড় গয়নায় চোখ ফোটেনি! শুধু একটি প্যাসেজই মনে পড়ে। তার সঙ্গে স্বর্গের কোনো তফাৎ নেই। ....
তারপর ৫৭ বছর কেটে গেছে, সেই পরীদের নিউ মার্কেটটাকে আর খুঁজে পাইনি। এখন আমরা সেখানে গিয়ে মাছ মাংস ডিম তরকারি আর বাদাম তেল কিনে, রাগে গজগজ করতে করতে ফিরি।
বলেছি না কোনো জায়গা, কোনো মানুষ পুরোপুরি মাটি দিয়ে গড়া হয় না, খানিকটা করে মনগড়াও বটে।'
সত্যি তো, আমরাও কি মনগড়া অলীক কল্পনালোকে মানুষের অবয়ব আঁকি না? মন দিয়ে বস্তবব্যতিরেকে মন-গড়া মানুষ গড়ি না। প্রকৃতপক্ষেই লীলা মজুমদার নিজেকে ব্যক্ত করেছেন বইটিতে, ছত্রে ছত্রে লিখেছেন নিজের গভীর বোধের কথা, পাঠকদের কাছে ধরা দিয়েছেন অবলীলায়।
Profile Image for Paulami.
66 reviews
August 14, 2021
পাকদন্ডী - লীলা মজুমদার

কোন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে কিছু জানার সুযোগ পেলে কৌতূহলের উদ্বেগ হয় ৷ এই আত্মজীবনী মূলক লেখিকার জীবনের স্মৃতিকথা সম্পর্কিত বই সেই বই নয়। এই বই পড়লে কৌতূহল যেন শান্তিতে পর্যবসিত হয় ৷

লেখিকা তাঁর ছোটবেলা থেকে শুরু করে পারিবারিক জীবন , কর্মজীবন, লেখনী জীবন, ব্যক্তিগত জীবন বিভিন্ন ঘটনার সমাবেশে সরস আঙ্গিকে অবলীলায় লিখে গেছেন ৷ নিজের ভালোলাগা, বেদনাকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করার এক অভাবনীয় মন্ত্র জানতেন লীলা মজুমদার৷ তিনি অনন্যা।

বিখ্যাত পরিবারের অংশ হয়ে বড় হয়ে ওঠা এই অতুলনীয়া নারী জীবনের প্রতিটি দিকে দৃষ্টি প্রদান ক��েছিলেন এবং অত্যন্ত বুদ্ধি ও সহানুভূতির সহযোগিতায় মানুষকে সহজভাবে বাঁচার রসদ পরিবেশন করেছেন নিজের লেখনীর মাধ্যমে ৷ 'পাকদন্ডী' নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে শেখার বই, জীবনকে ভালোবেসে উপভোগ করার বই , সজাগ মননে এগিয়ে চলার ক্ষমতা আয়ত্ত করার বই , দায়িত্বশীল ও সহনুভূতিশীল হয়ে ওঠার বই এবং ভালোবাসার বই |
এক কথায়, লীলা মজুমদার বিরচিত 'পাকদন্ডী' অসাধারণত্বের ঔজ্জ্বল্যে আলোকিত এক জীবনদর্শন ৷
Profile Image for Sadika.
31 reviews
March 16, 2021
লীলা মজুমদার- জীবনের প্রতি আশ্চর্য ইতিবাচক তিনি। ভরপুর কর্মোদ্দীপনা নিয়ে পার করেছেন একটা গোটা জীবন। বয়স তাঁর মনকে স্পর্শ করেনি। সমান বয়েসী অন্যরা যখন ইস্তফা দিয়েছেন বা দিচ্ছেন তখন তিনি পূর্ণ উদ্যমে সৃষ্টিতে মগ্ন হয়েছেন, নতুন শুরুর কথা ভেবেছেন। রায় পরিবার তাঁর মূলের তলায় মাটি জুগিয়েছে, আত্মম্ভরিতা নয়। যেমন তিনি একাধিকবার বলেছেন, 'যা দেখা যায়, যা শোনা যায়, যা করা যায়, সব দিয়ে তিলে তিলে একেকটা মানুষ তৈরি হয়।' 'রায়' পদবি তেমনি তাঁর লেখক এবং মানুষ সত্তা তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরণ।
বড়োদের জন্য লিখলেও শিশুসাহিত্যেই প্রাণ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। নিজেকে খুঁজে পেতে কেটে গেছে অনেকটা সময়। তবু শেষ পর্যন্ত ভেবেছেন, সাহিত্যই তাঁর জায়গা, ঝলমলে ক্যারিয়ার নয়।
বইটির বর্ণনা মুগ্ধ করে। জীবনের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে ফিরে দেখবার তাগিদ দেয়।
Profile Image for Uzzal Orpheus.
58 reviews5 followers
November 23, 2022
এইরকম ব��গুলো পড়তে ইচ্ছে করে। কারণ একজন মানুষ এই পৃথিবীতে তার গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দিল, সে কী বুঝলো, কী অনুভব করলো সেগুলা জানতে ইচ্ছে করে। লীলা মজুমদারের এই বইটির একটা বড় অংশ জুড়েই তার ব্যক্তিগত ডিটেইলস এসেছে, যার সাথে নিজেকে রিলেট করাটা মাঝে মাঝেই কঠিন হয়ে পড়েছে, বিরক্তি ও এসেছে। যাইহোক, বইটা শেষ করে এসব নিয়ে কোন অভিযোগ আর নেই। বইটা অনেকটা লেখিকার ব্যক্তিগত ডাইরীর মত, তিনি তার নিজের কথা, নিজের প্রিয়জনদের কথা, নিজের মত করে লিখেছেন।
Profile Image for Nazia Moon.
7 reviews8 followers
November 3, 2019
ত্রয়ী রায় এর পাশাপাশি সন্দেসের আরেক স্রষ্টা! এর থেকে শান্তির বই আর হয় না! স্নিগ্ধ আর সচ্ছ ধারার লেখা, সহজ আর বহমান লেখা ঠিক যেন সন্দেসের কোনো ছোটগল্প!
Profile Image for Md. Tahmid Mojumder.
64 reviews6 followers
January 25, 2023
"খেরোর খাতা"র মাধ্যমে লীলা মজুমদারের সাথে পরিচয়। ওটার মতো এই বইও মুগ্ধ করলো। অসাধারণ এক স্মৃতিকথা।
38 reviews12 followers
March 31, 2018
আমার মেয়ের সহকর্মী রুমানা নাসরীনের ফরমায়েসে সে লীলা মজুমদারের 'পাকদন্ডী ' ব্ইটি কিনে এনেছে। ঈদের ছুটির পর হস্তান্তর করবে, ফাঁকে বইয়ের মালিকের অনুমতি ছাড়াই ৪৪২ পৃষ্ঠার বইটি পড়ে ফেললাম। । প্রথম পর্বটি পড়ার সময় মনের ভেতর তিতলি সিনেমার গানটি বেজেই চলেছিল---- 'পাকদন্ডী' শব্দটিই এর জন্য দায়ী............
'মন খারাপের খবর আসে
বন পাহাড়ের দেশে
চৌকোনো সব বাক্সে
যেথায় যেমন থাকসে
মন খারাপের খবর পড়ে দাড়ুন ভালবেসে।
মেঘের ব্যাগের ভেতর ম্যাপ
রয়েছে মেঘ পিওনের পাড়ি
পাকদন্ডী পথ বেয়ে তার বাগান ঘেরা বাড়ী।'
পাকদন্ডী নিয়ে তাঁর একটা প্যারা দিয়ে দিলাম।
আর লীলা মজুমদারের বর্ণনায় শিলং দেখা হয়েছে।
লীলা মজুমদার শিশু সাহিত্যিক। বড়দের জন্যও লিখেছেন প্রচুর। উপেন্দ্র কিশোর রায়ের ভাতিজি। এ পরিচয়টিতেই তিনি গর্ব অনুভব করতেন বলে তার ' পাকদন্ডী ' ব্ইটি পড়ে মনে হয়েছে। লীলা মজুমদারের সময়কার ধারণা পেতে বইটি কাজে লাগবে। তবে দ্বিতীয় পর্বে এসে ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি বিষয় এসে গেছে। আবার এ বিষয়ে নিজে সচেতনও ছিলেন। বলেছেন,--"আমি ভালো করেই জানিএসব খুঁটিনাটি কথা আসলে অবান্তর, এতে আমার প্রিয়জনদের ছাড়া কারো কোনো কৌতূহল না থাকাই স্বাভাবিক। " তাছাড়া সন তারিখের গোলমালের কথা বার বার উল্লেখ করে নিজের দায়িত্ব কৌশলের সাথেই সেরেছেন। আমার মহালাভ তাঁর দেরীতে শুরু করা নিয়ে। মনের নির্জনতা পাননি বলেই দেরীতে শুরু, তবে সার্থকতার সাথে শেষ। আমিও যে মনের নির্জনতার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
Profile Image for Sambit.
16 reviews
January 31, 2017
হয়ত একটু বেশি আশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম তাই আশাহত হলাম... আসলে ভেবেছিলাম বইটি যেহেতু আত্মজীবনী তাই সেই সময়কালটাকে ভাল জানতে পারব... সেসব তো সেই ভাবে নেই, নিজের লেখার পিছনের গল্পগুলোও যদি একটু ভাল করে বলতেন...

যাই হোক শিশু সাহিত্যের উপর আগ্রহ বাড়ল, এটা প্রাপ্তি... আর প্রাপ্তি উপেন্দ্রাকিশোর সুকুমারদের নিয়ে কিছু তথ্য...
Profile Image for Tabassum Susmi.
5 reviews38 followers
September 3, 2019
১০০ নং গড়পার বা শিলং পাহাড় ঘুরে আসা যায় এই বইটা পড়লে। কিংবা লেখকের শৈশব, উপেন্দ্রকিশোরের বাড়িতে কাটানো শৈশব, সুকুমার রায়ের সান্নিধ্যে কাটানো শৈশব, চেরির স্তূপের শৈশব, যে শৈশবের পুরোটা তিনি লিখে লিখে ধার দিতে চেয়েছিলেন শিশুদের।
Displaying 1 - 30 of 31 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.